ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।Dengue fever - causes, symptoms, diagnosis and treatment

ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা। 

ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।Dengue fever - causes, symptoms, diagnosis and treatment


সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরের সার্বিক অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে সেই সঙ্গে ডেঙ্গুজ্বরের আক্রান্তের সংখ্যার পাশাপাশি মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। এ বছরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আগের বছরগুলোর তুলনায় সাংঘাতিক হতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই জোর পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রধারনত ডেঙ্গু বর্ষাকালের অসুখ তা সত্ত্বেও এখন শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই ডেঙ্গু সংক্রমণ নোটিশ দিচ্ছে।

গত কয়েকদিনে ঢাকাসহ সারা দেশে উল্লেখযোগ্য প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে বাসাবাড়ি, আঙিনাসহ নানারকম স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে যা কিনা এডিস মশার প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ। সুতরাং বর্ষাকালে ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিমান এইরকম বাড়তে পারে। সবার সচেতনতা, সবার সাহায্য এবং সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে ডেঙ্গু মোকাবিলা করার জন্য হবে।

ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর কি?

উপক্রান্তিয় তার সাথে ক্রান্তীয় অঞ্চলের গ্রীষ্ম-প্রধান দেশে ডেঙ্গু এবং ডেঙ্গু জ্বর একটি অতি সাধারণ ভেক্টর-বাহিত ভাইরাসঘটিত রোগ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, ল্যাটিন আমেরিকা তার সাথে আফ্রিকায় সবচেয়ে অধিক ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ্য যায়। ভারতবর্ষে প্রধানত প্রাক-গ্রীষ্ম এবং বর্ষা সময় এই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ডেঙ্গু সংক্রমণের হার সবচেয়ে অধিক থাকে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত যায়। এপ্রিল মাসে এই হাড় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। জুন-জুলাই মাস হতে ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিমান সাধারণত অপব্যয় পেতে দেখা যায়।

ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অংশেও এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটে। সময় এবং অঞ্চল-বিশেষে এই রোগ মহামারির আকারও ধারণ করে। বিনা চিকিৎসায়, ত্রুটি চিকিৎসায়, এবং দেরিতে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষেত্রেই রোগীর মরণ পর্যন্ত হয়।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের কোন বিশেষ লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে। ঠিক চিকিৎসায় বাসা তে থেকেই এই রোগের নিরাময় করা সম্ভব। একমাত্র বিশেষ কতিপয় ক্ষেত্রেই রোগীকে হসপিটালে অ্যাডমিটের দরকার হয়। সেই ক্ষেত্রেও 1–2 সপ্তাহের মধ্যে রোগী ভাল হয়ে যাওয়ার পূরণ সম্ভাবনা থাকে। এই রোগ সম্বন্ধে জনমানসে সচেতনতা বৃদ্ধি অতিশয় জরুরী। অল্প কিছু উপায় মেনে চললে ডেঙ্গুর প্রকোপ হতে আমরা নিজেদের রক্ষা করেতে পারি। এই রোগ লোকালয়ে ছড়িয়ে পরার হাত থেকে সহজেই নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গু (DENG-gey) জ্বর হল একটি মশা-বাহিত ভাইরাস-ঘটিত রোগ। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে প্রথমবার ডেঙ্গু-তে আক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোন উপসর্গ বা হাবভাব লক্ষ্য যায় না। কেবল ঈষৎ কয়েকটি ক্ষেত্রেই রোগের ইফেক্ট নিবিড় হয়। ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গ গুলি হোল –

উচ্চ জ্বর (40°C/104°F)

তীব্র মাথার যন্ত্রণা

চোখের পিছনে ব্যথার অনুভূতি

মাংসপেশি এবং অস্থি সন্ধি (bone) তে কষ্ট

বমিভাব

মাথাঘোরা

গ্রন্থি ফুলে যাওয়া

ত্বকে নানারকম স্থানে ফুসকুড়ি

এই উপসর্গ গুলি রোগ সংক্রমণের 4 থেকে 10 দিনের ভিতরে নোটিশ দেয়। প্রধারনত 2 থেকে 7 দিন পর্যন্ত উপসর্গ স্থায়ী হতে পারে। দ্বিতীয় বার ডেঙ্গু তে আক্রান্ত হলে রোগের ভয়াভয়তা বৃদ্ধি পায়। সেই কারনে পূর্বে ডেঙ্গু তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত সতর্কতা মেনে চলতে জানানো হয়।

ডেঙ্গুর গুরুতর উপসর্গ গুলি হোল –

প্রচণ্ড পেট ব্যথা

ক্রমাগত বমি হওয়া

মারি বা নাক হতে রক্তপাত

প্রস্রাবে এবং মলের সঙ্গে রক্তপাত

অনিয়ন্ত্রিত পায়খানা

ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ (যা ক্ষতের মতো দেখাতে পারে)

দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস

ক্লান্তি

বিরক্তি এবং অস্থিরতা

ডেঙ্গুর জীবাণু মানুষের শরীরের রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে রক্তনালীতে সৃষ্টি হয়। রক্ত রবাহে ক্লট-তৈরির কোষগুলির (প্ল্যাটলেট) সংখ্যা কমে যায় যেতে থাকে। এর জন্য মানুষের দেহে শক লাগা, শরীরের নানারকম অংশ থেকে রক্তপাত, যে কোন শরীরের ক্ষতি তার সাথে শেষ পর্যন্ত রোগীর মরণ থেকে পারে। রোগীর শরীরে গুরুতর উপসর্গ গুলির কোন ১টি লক্ষ্য দিলে পরম নিশ্চয়ই দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা কর্তব্য বা রোগী কে নিকটবর্তী হসপিটালে ভর্তি করানো দরকার। অন্যথায় রোগীর প্রাণসংকট থেকে পারে।

ডেঙ্গুতে প্লেটলেটের সংখ্যা প্রধারনত কত হয়?

স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সম্পন্ন একজন স্বীকৃত বয়স্ক একজন মানুষের প্লেটলেট সংখ্যা হয় 150,000 হতে 450,000 প্লেটলেট প্রতি microliter রক্তে। উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীদের এই সংখ্যা 20,000 এর নিম্নদেশে চলে যেতে পারে। এই টাইম রক্তপাতের ঝুঁকি সর্বোচ্চ হয়। মাঝারি ঝুঁকি পূর্ণ রোগীদের প্লেটলেট পরিমান 21-40,000/cumm ভিতরে থাকে। অবশ্য ডেঙ্গু সংক্রমণে প্রচুর ক্ষেত্রেই প্লেটলেট সংখ্যার দ্রুত সংস্কার হয়। প্লেটলেট কাউন্ট কম তার সাথে রক্তক্ষরণের লক্ষণ পাবলিশ পেলে তবেই প্লেটলেট প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। নাহলে সংক্রমণ কমার সঙ্গে সাথে আমাদের শরীরে স্বাভাবিক ভাবে প্লেটলেট কাউন্ট বৃদ্ধি পায়। এর জন্য চাই অনেক সংখ্যায় ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ফোলেট এবং পটাসিয়াম পুষ্ট অন্ন গ্রহন।

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা

ডেঙ্গুর চিকিৎসার বিশেষ কোন রোগের প্রতিকারক বা প্রতিষেধক এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর সংক্রমণ পারিবারিক চিকিৎসাতেই হ্রাস পায় যায়। চিকিৎসকরা পেরাসিটামিল জাতীয় ওষুধ দিয়ে দুঃখ এবং জ্বরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেন। Non-steroidal প্রদাহ-প্রতিরোধী ওষুধের রক্ত ক্ষরণের সম্ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রোগের মাত্রা এক্সট্রা ভাবে বৃদ্ধি পেলে রোগী কে হসপিটালে ভর্তি তার সাথে ডাক্তারি পরিদর্শন তে রাখা নিরতিশয় জরুরী। হসপিটালে ডেঙ্গু রোগীদের শিরায় (IV) ইলেক্ট্রোলাইট (লবণ) গলিত দেওয়া হয়। এতে শরীরে দরকারী পানি তার সাথে লবণের যোগান বজায় থাকে।

ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের জন্য ডায়েট

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের জন্য, কয়েকটি পুষ্টি উপাদান বিশেষ ভাবে কল্যাণময় থেকে পারে, যেমন

ভিটামিন সি (সাইট্রাস ফল, বেরি তার সাথে শাক-সবজিতে পাওয়া যায়),

জিঙ্ক (সামুদ্রিক খাবার, মটরশুটি এবং বাদামে পাওয়া যায়)

আয়রন (মাংস, মটরশুঁটিতে পাওয়া যায়)

ওটমিল (সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট তার সাথে ফাইবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ)

পেঁপে

নারিকেলের জল

সেই সঙ্গে অনেক পরিমাণে জল পান করা দরকার দেহ কে হাইড্রেট করার জন্য।

ডেঙ্গু হলে অনুচিত খাবার

সহজে হজম হয়না এইরকম অন্ন ডেঙ্গু রোগী দের ভোজন করা কর্তব্য নয়। যেমন –

আমিষ অন্ন

চর্বি

তৈলাক্ত খাবার

ভাজাভুজি

ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার

ডেঙ্গু ১টি মশা-বাহিত রোগ। তাই মশার কামড়ের হাত হতে নিজেকে তার সাথে আপনার ফেমেলি কে বাঁচান।

বাড়ির চারপাশে পানি জমতে দেবেন না। জমা জলে মশারা বংশবিস্তার করে। জল জমতে না দিয়ে মশার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সপ্তাহে অন্তত একবার পানি জমতে পারে এরূপ ঠাঁই পরিদর্শন করুন। তার সাথে উদ্ভিদের টব, ফুলদানি, পরে থাকা গাড়ির টায়ারের জমে থাকা জল ফেলে দিন।শরীর ঢাকনা জামা কাপড় উদাহরণসরূপ লম্বা-হাতা শার্ট, লম্বা প্যান্ট, মোজা এবং জুতা পরুন।ডেঙ্গু ম্যালওয়্যার বহনকারী মশা হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবচেয়ে বহু সক্রিয় থাকে। এই সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন।রাতে শোবার সময় মশারী প্রয়োগ করুন।মশা নিরোধক কেমিক্যাল যেমন পারমেথ্রিন ব্যবহার করুন।

উপসংহার

ডেঙ্গু জ্বর একটি সাধারণ রোগ। তা সত্ত্বেও উপেক্ষা অবজ্ঞা করলে এই রোগ সাংঘাতিক হতে পারে। শহরাঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি। এইজন্য নগরবাসীকে আরেকটু নিদ্রাহীন ও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যাদের ডেঙ্গু হয়েছে তাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয় ডেঙ্গু সংক্রমণ গুরুতর হতে পারে। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন তার সাথে চমৎকার থাকুন। প্রয়োজনে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post